কেমন আছে চীনের উইঘুর মুসলিমরা


কেমন আছে চীনের উইঘুর মুসলিমরা, উইঘুর মুসলিম, Uyghur, Uyghur Muslims
Uyghur-Muslims

জাতিসংঘ বলছে চিনের লাখ লাখ উইগার মুসলিমদের  বন্দি করে রাখা হয়েছে, এদিকে চীন তা অস্বীকার করে আসছেন। আসলে চীনের উইগারদের সাথে কি হচ্ছে আর  উইগাররাই বা কারা ?

করা এই উইগার মুসলিম  :

উইগাররা মূলত মুসলিম  তাদের সংখ্যা প্রায় 1 কোটি 10 লাখের মতো। তারা বাস করেন চীনের পশ্চিমাঞ্চলে। সংস্কৃতিগত ও জাতিগতভাবে সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশগুলোর কাছাকাছি তারা নিজেদের মনে করেন। তাদের ভাষা অনেকটা তুর্কিদের মত কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিনজিয়াংয়ে বিরাট সংখ্যক মানুষের অভিবাসন হয়েছে এবং উইগাররা মনে করছেন এতে করে তাদের জীবনযাপন এবং সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে। এটা একেবারে চীনের পশ্চিম প্রান্তে এবং একই সাথে এটা চিনের সবচেয়ে বড় প্রদেশ। এর পাশে আছে আরো কয়েকটি দেশ ভারত, আফগানিস্তান এবং মঙ্গোলিয়া। তিব্বতের মত  শিনজিয়াং ও স্বায়ত্তশাসিত এলাকা, তার অর্থ হচ্ছে কাগজে কলমে হলেও বেইজিং এর বাইরেও তারা নিজেদের বিষয় নিয়ে আলাদা ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হল এই দুটি অঞ্চল চিনের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কঠোর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। চীন  সরকারের দাবি তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি ইসলামপন্থী গ্রুপের সন্ত্রাসী তৎপরতা মোকাবেলা করছে। বেইজিং বলছে উইগার মুসলিমদের কেউ কেউ জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু মানবাধিকার  সংগঠন বলছে সেখানকার লোকজনের উপর চীনের দমন-পীড়নের কারণেই সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার আঞ্চলিক রাজধানীতে 2009 সালের দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে 200 জন তাদের বেশির ভাগই ছিলেন চিনা হান। তারপর থেকে সেখানে আরও কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে, হামলা হয়েছে পুলিশ স্টেশনে এবং সরকারি ভবনেও।


2014 সালে এরকম কিছু হামলায় নিহত হয়েছে 96 জন। সরকারের পক্ষ থেকে এসব হামলার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দায়ী করা হয়েছে। বেইজিং বলছে শিনজিয়াং এর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা চীনের অন্যত্রও হামলা চালিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন 2013 সালের অক্টোবর মাসে তারা তিয়েনমেন স্কয়ার এর গাড়ি দিয়েও হামলা করেছিল। 2017 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শিনজিয়াং এ ছুরি দিয়ে চালানো হামলায় 5 জন নিহত হওয়ার পর সরকার সেখানে নতুন করে অভিযান চালাতে শুরু করে।

উইগার মুসলিমদের বর্তমান অবস্থা :

জাতিসংঘ এর মানবাধিকার  বিষয়ক একটি কমিটি 2018 সালের অগাস্ট মাসে জানতে পারে যে, চীন সরকার উইগারদের স্বায়ত্তশাসিত এলাকাকে মূলত একটি বন্দিশিবিরে পরিণত করেছে, সেখানে 10 লাখের মতো মানুষকে বন্দি করে রাখা হয়েছে এসব তথ্যের সাথে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগের মিল পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন Human Rights এর ভাষ্যমতে, যে সব লোকজনের তথাকথিত 26 দেশের সাথে স্পর্শ কাতর দেশের আত্মীয়-স্বজন আছেন তাদেরকে এসব ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, এছাড়াও যারা মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে দেশের কারো সাথে যোগাযোগ করেছে তাদেরকে টার্গেট করেছে প্রতিপক্ষ। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে এসব ক্যাম্পে যাদেরকে রাখা হয়েছে তাদেরকে চীনা ম্যান্ডারিন ভাষা শেখানো হচ্ছে ও প্রেসিডেন্টের অনুগত থাকতে বলা হচ্ছে আরও বলা হচ্ছে তাদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সমালোচনা করতে অথবা সেই ধর্ম পরিত্যাগ করতে। উইগার সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে, তাদের বাড়িঘরে ও দরজায় লাগিয়ে দেয়া হয়েছে বিশেষ কোড, বসানো হয়েছে মুখ দেখে শনাক্ত করা যায় এরকম ক্যামেরা। ফলে কোন বাড়িতে কারা যাচ্ছেন, থাকছেন বা বের হচ্ছেন সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নজর রাখতে পারছে এবং তাদেরকে নানা ধরনের বায়োমেট্রিক পরীক্ষাও দিতে হচ্ছে।


অনুসন্ধান বিষয়ক সাংবাদিকদের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ICIJ এর দলে রয়েছে, এই সংস্থাটিতে রয়েছে BBC সহ 17 টি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা। বিবিসির কাছে যেসব দলিল এসেছে সেগুলো মূলত কিভাবে এই বন্দীশিবির চালাতে হবে তার নির্দেশনাবলী। শিনজিয়াং কমিউনিস্ট পার্টির ডেপুটি সেক্রেটারি 2017 সালের 9 পৃষ্ঠার এই নির্দেশনাবলী এর দলিল তাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন যারা এই শিবির পরিচালনা করত। এসব নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, এই শিবিরগুলো অত্যন্ত সুরক্ষিত জেলখানার মতো চালাতে হবে, বজায় রাখতে হবে কঠোর শৃঙ্খলা এবং কেউ যাতে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে না পারে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।


সাবেক বন্দীরা বিবিসিকে জানিয়েছে এখানে তাদের উপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং প্রদেশে এই ধরনের গোপন বন্দিশালায় কথা চীন বরাবর অস্বিকার করে এসেছে এবং চীন বলে থাকে যে মুসলিমরা নিজেরাই স্বেচ্ছায় সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছেন। তাদের দাবি এগুলো আসলে প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা শিবির। বেইজিং দাবি করে যে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় গত তিন বছর ধরে এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এদিকে BBC এর হাতে যে দলিল এসেছে সে ব্যাপারে যুক্তরাজ্যে চীনের রাষ্ট্রদূত এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন এগুলো ভুয়া খবর।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উইগার মুসলিমদের যে নির্যাতন করা হচ্ছে তাতে নিন্দা জানিয়েছি কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। 2018 সালে যুক্তরাজ্যের তখনকার প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, চীন সফরে গেলে UK সরকার থেকে বলা হয় মুসলিমদের উপর যা করা হচ্ছে তাতে করে তাদের উদ্বেগ থেকেই যাবে। মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে একটি বিল পাস করে, বিলটিতে শিনজিয়াংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি সরকারের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয় এবং তাদেরকে এই শিবির পরিচালনাকারী ও পরিকল্পনাকারী বলে মনে করা হয়।

কেমন আছেন চীনের উইঘুর মুসলিমরা, উইঘুর মুসলিমরা
Uighur-Muslims

চীনের উইঘুর মুসলিমদের এমন অমানবিক নির্যাতনের শিকার হবার কথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে সারা পৃথিবীর মুসলিমরা নানাভাবে তাদের আন্দোলন ও ক্ষোভ প্রকাশ করে । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উইঘুর মুসলিমদের পক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচি ও চীনের পণ্য বয়কোট সহ নানাভাবে এইসব দেশ তাদের চাপ চীনের উপর প্রয়োগ করে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । শুধু মুসলিমরাই নয় মুসলিমদের সাথে সাথে বিভিন্ন ধর্মের লোকেরাও এই আন্দোলনে উইঘুর মুসলিমদের পক্ষে কথা বলছে । কিন্তু চীন তাদের বক্তব্যে বলেন, তারা তাদের দেশের অভ্যন্তরের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে উইঘুর মুসলিমদের জন্য যেই পরিকলকনা করেছে তাতে উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতনের অভিযোগে সম্পূর্ণ ভিক্তিহিন । 

জাতিসংঘ বলছে চীনে লাখ লাখ উইগার মুসলিমদের ধরপাকড়ের খবরে তারা উদ্বিগ্ন, যাদের আটক রাখা হয়েছে জাতিসংঘ অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেছে।

Post a Comment

0 Comments