মরুভূমির বুকে বিলাসী শহর দুবাই

বিলাসী জীবন, দুবাই, Dubai city
Dubai-City

মরুভূমির বুকে পৃথীবির বিলাসবহুল শহর :

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে অসাধারণ সুন্দর একটি দেশের নাম দুবাই। দুবাইয়ে প্রথম ঘুরতে গেলে আপনার মনে হবে আপনি অন্য কোন দুনিয়াতে চলে এসেছেন কারণ দুবাই এর সাজসজ্জা যেমন অপরূপ তেমনি অদ্ভুত সেখানকার লোকেদের অভ্যাাস, এমনকি তাদের বসবাস করার জায়গা গুলিও। আজকে যেখানে উচু উচু দালান আর বিলাসবহুল গাড়ির সমারহ ও উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যে দুবাই নিমজ্জিত, কয়েক দশক আগে এই একই দুবাইয়ের পরিস্থিতি কিন্তু এমন ছিলো না। দুবাই শহরের ধনী হওয়ার পেছনে আরব আমিরাতের অন্যন্য শহরের মত তেলের অবদান একেবারে নেই বললেই চলে। দুবাই শহরের ধনী হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হলো এর বিজনেস স্ট্রেটিজি। তা না হলে কয়েক দশক আগে যেইখানে মরুভূমির বালু ছাড়া আর কিছুই ছিলো না, আজকে সেই জায়গায় কিভাবে বিশ্বের বিলাসবহুল শহর গড়ে ওঠে। এই দুবাইকে আরো উন্নত করতে হাতে নেয়া হয়েছে দুবাই 10X প্রকল্প। 

দুবাইকে বিশ্বের কাছে উন্নত করার জন্য যে বিজনেস মডেল হাতে নেয়া হয়েছে তার জন্যই দুবাই আজ বিশ্বের সবচেয়ে বিলাবহুল জায়গা। দুবাইয়ের কাছে আজকে যা কিছুই আছে তা হয়তো বিশ্বে একমাত্র অথবা সবথেকে উন্নত। তাইতো আমেরিকার ডিজনিল্যান্ডকে দুবাই প্রস্তাব দেয় যে, দুবাইয়েও যেনো এই কোম্পানি এমন একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কিন্তু তাতে শর্ত ছিল সেটা হতে হবে আমেরিকার ডিজনিল্যান্ড এর থেকে ৫ গুন বড়। কিন্তু আমেরিকা তাই সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। দুবাই তাই এর নাম বদলে নতুন নাম দেয় দুবাইলেন্ড। নাম বদলের পর ডিজনিল্যান্ড দুবাইয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়।

দুবাইয়ের সৌখিনতা ও বিলাসিতা :

পশুপাখি কেউ ভালবাসেনা এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর এজন্যই মানুষ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি শখের বসে পুষে থাকে। শখের বশে পালন করা এসব প্রাণীর তালিকায় থাকে সাধারণত কুকুর বা বিড়াল। কিন্তু দুবাইয়ের ব্যাপারটাই অন্যরকম, সেখানে কেউ এই শখের বশে কুকুর বিড়াল পালন করাকে পছন্দ করেন না। নিজেদের গরম দেখাতে কুকুর বিড়াল পালন  না করে তার জায়গায় তারা পালন করে আস্ত বাঘ বা সিংহ।

আমরা সাধারণত টেনিস বা ফুটবল মাঠে খেলে থাকি কিন্তু দুবাইয়ের লোকেরা টেনিস আকাশের চূড়ায় বা আকাশছোঁয়া বিল্ডিংয়ে খেলতে পছন্দ করে। শুনতে পাগলামি মনে হলেও এখানে এটা খুবই জনপ্রিয়। আপনি কিসের উপরে রাইডিং করতে পছন্দ করেন ? সাধারণভাবে এই প্রশ্নটি করলে উত্তর মিলবে ঘোড়া অথবা মোটরসাইকেল। কিন্তু কোথাও যদি দেখেন কেউ সিংহের পিঠে চড়ে বেড়াচ্ছে তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকবেন যে আপনি দুবাই চলে এসেছেন। দামি জিনিসের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ দুবাই লোকেদের সবসময়। দুবাই লোকের মুখে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, এমন কামাও যেন দুবাই তোমার কাছে সস্তা লাগে। যে কোন সস্তা জিনিসে অযথা টাকা ঢেলে অযথা লোকদেখানোই দুবাইয়ের লোকেদের প্রথম পছন্দ। যেমন ধরুন কার ডেলিভারির মতন সস্তা বিষয়কে দুবাইয়ের লোকেরা নিয়ে গেছে অন্য মাত্রায়। এজন্যই এখানকার কার ডেলিভারি হয় হেলিকপ্টার দিয়ে। আর এই কার ডেলিভারি চাইলে আপনি যে কোন জায়গাতে নিতে পারেন, হোকনা সেটা 100 তলা বিল্ডিং এর ছাদের উপর।তারা এভাবেই এই অদ্ভুত ডেলিভারিকে সব থেকে নিরাপদ মনে করেন। এজন্যই এখানকার বিলাসবহুল জনগণ তাদের কার ডেলিভারির জন্য হেলিকপ্টার কে সবথেকে বেশি পছন্দ মনে করেন।

বিলাসী জীবন, দুবাই, Dubai city, মরুভূমির বুকে বিলাসী শহর, বুর্জ খলিফা,
দুবাই শহর


দুবাইয়ের প্রায় পুরোটা জুড়েই রয়েছে মরুভূমি এজন্য এখানে প্রচণ্ড গরম পরে। কিন্তু আপনি চাইলে দুবাইয়ে সারাবছর বরফের দেশে থাকার মতো মজা নিতে পারবেন। মরুভূমির মতো একটি দেশে এটা সত্যিই অবাক করার মত। পৃথিবীর সব দেশের লোকেরা স্বর্ণ পরতে পছন্দ করেন কিন্তু দুবাই লোকেদের স্বর্ণ পড়ার থেকে চালাতে বেশি পছন্দ করেন। তারা স্বর্ণ দিয়ে গাড়ি তৈরি করে রাস্তায় চালায় এবং তাদের বিলাসবহুল জীবন উপভোগ করে। দুবাইয়ের মতো দেশে গোল্ড কার একেবারে একটি সাধারন ব্যাপার।

বাস্তবে না দেখলেও আমরা অনেকেই টিভিতে ঘোড়া বা উটের রেস দেখেছি। দুবাইয়েও উটের রেস হয় কিন্তু তারা এই উটের রেস কে নিয়ে গেছে অন্য একটি মাত্রায়। রেসের এই উট গুলোকে কোন মানুষ চালায় না, মানুষের বদলে রোবট দিয়ে তারা এই রেস চালায়। সুপার কার কার না পছন্দ, যেখানে সুপার কার ক্রয় করার জন্য মানুষের স্বপ্ন দেখতে হয় সেখানে দুবাইয়ে এমন একটি কার ইয়ার্ড আছে যেখানে সুপার কার কিছুদিন ব্যবহার করার পর তা ফেলে রাখা হয়। যেখানে আমাদের দেশের কমোডগুলোও সিরামিকে তৈরি সেখানে দুবাইয়ে কিছু কিছু ধনী শেখ আছে যাদের কমোড সম্পূর্ণ সোনার তৈরি। প্রতিটি দেশেই মানুষের কুকুর বিড়াল নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা কিন্তু কেউ যদি একটি উট কে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে কোটি টাকা খরচ করে তাহলে কিন্তু এটি কোন সাধারণ ঘটনা নয়। একমাত্র দুবাইতেই সচরাচর এমন দৃশ্য চোখে দেখা যায়।

দামি ফোন বলতেই আমরা সাধারণত আইফোনকে বুঝে থাকি কিন্তু দুবাইয়ের লোকদের কাছে এই আইফোন গরিবের ফোন। দুবাইয়ের ধনী লোকেরা স্বর্ণের তৈরি মোবাইল ব্যবহার করে থাকে যার বাটনগুলো হীরার তৈরি। এটিএম বুথ থেকে টাকা বের হতে আমরা সবাই দেখেছি কিন্তু দুবাইয়ে স্বর্ণ এমন জনপ্রিয় যে স্বর্ণের জন্য দুবাইয়ে এটিএম বুথ বসানো আছে আর সেখান থেকে স্বর্ণের বিস্কুট বের হয়। পৃথিবীর সব দেশের পুলিশ সাধারণত জীপ বা নরমাল কার ব্যবহার করে থাকে কিন্তু দুবাইয়ের পুলিশ পৃথিবীর সবথেকে দামি গাড়ি ব্যবহার করে যার মধ্যে ল্যাম্বরগিনি ও ফেরারীও রয়েছে। তাইতো কিছু কিছু পর্যটকেরা দুবাই ঘুরতে গিয়ে ইচ্ছে করে আইন ভঙ্গ করে যাতে করে তারা দুবাইয়ের পুলিশের সুপার কারে চড়তে পারে। পৃথিবীতে সবথেকে বেশি সুপার কার দুবাইতেই আছে।

দুবাইয়ে এমন আরো অনেক কিছু আছে যেগুলো হয়ত কোন জায়গায় দেখতে পারবেন না। যেগুলো শুধুমাত্র দুবাইতেই দেখতে পাওয়া যাবে।

Post a Comment

0 Comments